আলোকিত সিলেটঃ
শাল্লা উপজেলায় ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সবচেয়ে কম শুরু হয়েছে। বড় বড় ক্লোজারগুলোতে কাজ শুরু না হওয়ায় বোরো ফসল নিয়ে চিন্তায় রয়েছে হাওরপাড়ের কৃষক। আবার কিছু বাঁধে কাজ শুরু হলেও চলছে ঢিলেঢালা ভাবে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কোনো ধরনের তদারকি না থাকায় পিআইসির সদস্যরা দায়সাড়াভাবে কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
শুধু তাই নয় উপজেলায় হাওর রক্ষা বাঁধের পিআইসি গঠন নিয়ে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্ট্যান্ডরিলিজসহ নানা সমস্যা থাকায় এবার বাঁধের কাজ শুরু করতেই বিলম্ব হয়েছে। উপজেলা সদরের পাশের বড় ক্লোজার(ভাঙনে) মাউতির বাঁধে এখনো কাজ শুরু হয় নি। উপজেলা সদরের পাশের ঘুঙ্গিয়ারগাঁও গ্রামের কৃষক বরুণ দাস বলেন, উপজেলা পরিষদ থেকে দেখা যায় দাঁড়াইন নদীর পাড়ের মাউতির ভাঙন। এই ভাঙনে এখনো বাঁধের কাজ করানোর জন্য মাটি কাটার মেশিন এক্সেভেটর আসেনি। পরে মাটির কাজ করলে বাঁধ থাকবে দুর্বল। এই বাঁধ ভাঙলে উপজেলার আঙ্গাউড়া থেকে নেত্রকোণার খালিয়াজুরি, ইটনা, মিঠামইনের হাওরের ফসলও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
একই গ্রামের কৃষক রবীন্দ্র দাস বলেন,‘অখন কাম (কাজ) করলে মাটি বসে যেত, যতদিন যাইবো বৃষ্টির দিন আইবো, বৃষ্টির দিনে কাজ করতে সমস্যা অইবো, কামও দুর্বল অইবো।
শাল্লার কেবল এই মাউতির ভাঙন নয়। উপজেলার গুনারহাটি, বৈশাখালি, নোয়াজালাল, হরিনগর, গরুচড়া, উড়িষ্যা, পাঠাবাউরী, জয়পুর, চাপ্টার, কাটাগাং, করচ খাল, হিঙ্গেরখাড়া, হিজল ট্রি, হাওয়ার খাল, সাপুরিয়া, সুবচনাই, ডুমরা খেয়াঘাট পুরাতন, ডুমরা খেয়াঘাট নতুন, শ্রীহাইল জোয়ারিয়া, করাইন্নার খাল ও বিষ্ণুপুর ক্লোজারের কাজের একই অবস্থা।
স্থানীয় বাহাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু বললেন, আমার ইউনিয়নে মাউতি, জোগারবন্দ এবং কাটাখালির ভাঙন তিনটাই বড় ক্লোজার। কিন্তু এখনো এসব ভাঙনে বাঁধের কাজ শুরু হয় নি। অন্যান্য বাঁধেও একই অবস্থা। এবার বাঁধের কাজের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে অনৈতিক লেনদেন হয়েছে। এক-দুই লাখ টাকা আগে দিতে হয়েছে। হাওর রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির উপজেলা সভাপতি বিদায়ী ইউএনও ও সদস্য সচিব পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এই টাকা নিয়েছেন। অনেকে ঋণ করে, গরু বিক্রি করে টাকা দিয়েছে। তাদের (পিআইসিদের) কাছে এখন টাকা নাই। বাঁধ নির্মাণের প্রথম কিস্তির টাকা হাতে না এলে কাজ শুরু করার ক্ষমতা নেই পিআইসি’র লোকজনের। অনেক ক্লোজারে দূর থেকে মাটি আনতে হয়। শাল্লার হাওর নদীতে ফাল্গুন মাসে পানি আসে। এখন কাজ শুরু না করলে শেষ করতে সমস্যা হবে। তিনি জানান, এসব বিষয় নিয়ে কথা বলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুম তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তিনি উচ্চ আদালত থেকে বৃহস্পতিবার জামিন নিয়ে রোববার এলাকায় এসেছেন।
উপজেলার শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস ছাত্তার বললেন, এবার পিআইসি গঠনের শুরুতেই গত ১১ জানুয়ারি সাবেক চেয়ারম্যানগণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও বদলি হন। এ কারণে পিআইসি গঠনে বিলম্ব হয়। দুইদিন আগে পিআইসির লোকজন কার্যাদেশ পেয়েছেন, কোন কোন বাঁধে সবেমাত্র কাজ শুরু হয়েছে।
শাল্লা উপজেলা হাওর রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, শাল্লায় ১৩৮ টি অংশে বাঁধের কাজ হবে। এরমধ্যে ২২ টি ক্লোজার। ১৩ টি ক্লোজারসহ ৬৩ টি অংশে বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। এই সপ্তাহের মধ্যে অন্যগুলোতে কাজ শুরু হবে। মাউতির বাঁধে রোববারই কাজ শুরু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টুর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোন পিআইসি থেকে কেউ টাকা নেয়নি। বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু একাই ২০ টি পিআইসি নিতে চেয়েছিলেন। আমি এভাবে সম্ভব নয় বলেছিলাম। পরে তিনি আমার এবং আমার অন্য সহকর্মীদের উপর অতির্কিতে এসে হামলা করেন। অফিসের কাগজপত্র ছিড়ে ফেলেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, শাল্লায় পিআইসি গঠন করতে এবং কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এখন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সকলে সক্রিয় থাকলে কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা যাবে।
জেলা প্রশাসক, জেলা হাওর রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শাল্লায় পিআইসি গঠনের শুরুতেই কিছু সমস্যা হয়েছিল, এ কারণে পিআইসি গঠন এবং কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। এখন দ্রুতই কাজ শুরু হবে। সেখানে আমাদের বিশেষ নজর থাকবে।
প্রসঙ্গত. জেলার সকল হাওর রক্ষা বাঁধে ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ